Skip to main content

সোহাগের_সোহাগ_রাত










লেখিকা : আবিদা সুলতানা


" কনের ভাইকে গিয়ে বলবো তুই আগে একটা বিয়ে করেছিস ? "
-" আমি আবার বিয়ে করলাম কবে ? "
-" করিস নি। কিন্তু বরের বন্ধুরা গিয়ে বললে ঠিকই বিশ্বাস করবে। তারপর ধরে গণপিটুনি দিবে। "

আমাদের কথা শুনে সোহাগ মুখ থেকে রুমাল সড়িয়ে করুণ ভাবে চেয়ে রইলো। প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, " তোদের মতো বন্ধু আছে যার ; তার শত্রুর কি প্রয়োজন ? "

সাইফুল সোহাগের রুমাল ধরা হাতটা সোহাগের মুখের উপর তুলে দিয়ে বললো, " বর বরের মতো থাক। মুখে রুমাল দিয়ে চুপচাপ বসে থাক। বিশ লাখ টাকা যৌতুক নিয়েছিস।  আর হাজার পাঁচেক টাকা আমাদের দিবি না ?  আমরা ব্যাচেলর পার্টি করবো। জলদী টাকা দে। নয়তো গেলাম কনের ভাই এর কাছে। "

-" যৌতুক কি আমি নিছি ? আব্বা নিছে।"
-" গেলাম তাইলে। "
-" আব্বা! ও আব্বা! কই আপনি ? "

আমি রেগে বললাম, " তোর বাপরে ডাকিস কেন ? "
-" আমি কি টাকা নিয়ে বসে আছি ? টাকা সব আব্বার কাছে। "

এমন সময় বরের প্যান্ডেলের সামনে চলে আসলেন সোহাগের বাবা। সোহাগ বললো, " আব্বা! ওদের কাছে পনেরো হাজার টাকা দেন তো। "

চাইলাম পাঁচ হাজার। আর দিতে বলছে কি না পাঁচ হাজার। টাকার অংক শুনে আমাদের সবার চোখ বড় হয়ে গেলো।

সোহাগের বাবা পকেট থেকে পনেরো খানা এক হাজার টাকার নোট বের করে দিলেন। টাকাটা হাতে নিয়ে উঠতে যাবো সোহাগ হাত ধরে থামিয়ে বললো, " পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তোরা পার্টি কর। আর দশ হাজার টাকা দিয়ে আমার বউয়ের জন্য একটা গিফট কিনিস। সোহাগ রাতে নতুন বউকে গিফট দিতে হয়। আর তুই আমার নামে একটা রোমান্টিক চিঠি লিখে গিফটের সাথে দিয়ে দিস। "

ঠিক যতোটা খুশী হয়ে ছিলাম ; সোহাগের কথা শুনে ঠিক ততোটাই কষ্ট পেলাম। কই পনেরো হাজার আর কই পাঁচ হাজার! মুখটা কালো করে সোহাগকে বললাম, " আচ্ছা। "


বিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে সোজা সালিমারে চলে আসলাম। সাইফুলকে বললাম, " এখানে ঢোকার আগে ; চল সোহাগের গিফট কিনি। "

সাইফুল কি জানি ভাবলো। তারপর বললো, " গিফট দেয়ার কি দরকার ? আবার বৌভাত আছে। সেদিন পার্টির টাকা কই পাবো। "

-" তাহলে কি করা যায় ? "

সাইফুল আমার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো, " আমার বাসায় একটা চমকপ্রদ জিনিস আছে। ওটাই রেপিং করে দিয়ে দেবো। "

আমিও আর না করলাম না। আর যাই হোক দশ হাজার টাকার ব্যাপার।

চোখটা সবে লেগে এসেছে এমন সময় দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হলো। মোবাইলের স্ক্রিনে চেয়ে দেখি সময় প্রায় রাত তিনটে। এতোরাতে কে এলো ?

দরজা খুলতেই দেখি সোহাগ দাঁড়িয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, " তুই এতো রাতে ?"

সোহাগ কোন কথা বললো না। আমাকে ঢাক্কা দিয়ে সোহাগ রুমে প্রবেশ করলো। আমিও সোহাগের পিছু পিছু ঢুকে লাইটের সুইচ দিতে দিতে বললাম, " তোর বাসর রাত আজকে। তুই থাকবি বউয়ের কাছে। আমার এখানে কি চাস ? "

কথা শেষ হতেই লাইটটা জ্বলে উঠলো। আর লাইটের আলোয় সোহাগের চেহারা দেখেই ভয় পেয়ে আবার লাইটের সুইচ অফ করে দিলাম। নিজে নিজেকে সান্তনা দিলাম এই বলে -" ঘুমের ঘোরে ভুল দেখেছি। "

আবার লাইট এর সুইচ দিলাম। কিন্তু নাহ! এবারো সোহাগের চেহারার কোন পরিবর্তন নাই। কপালের বাম পাশটা ফুলে আছে। ঠোঁট ফেটে গেছে। মাথার একপাশ ফেটে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত ঝড়ছে। বিয়ের জন্য কেনা শেরওয়ানীটার জায়গায় জায়গায় ছিঁড়ে গেছে।

আমি দৌড়ে সোহাগের কাছে এসে বললাম, " কি রে তোর এই অবস্থা করলো কে ? এমনে কে মারলো তোরে ?"

সোহাগ আমার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়া সোহাগ জিজ্ঞেস করলো, " তোর হাতে যে দশ হাজার টাকা দিলাম গিফট কিনার জন্য ; কি গিফট দিছিস ওইটা ? "

কাজ সেড়েছে। কি উত্তর দিবো বুঝতে পারছি না। আমতা আমতা করে বললাম, " বেল্ট। "
-" কিসের বেল্ট ? "
-" কুকুরের বেল্ট। কিন্তু বিশ্বাস কর বন্ধু এটা সাইফুলের আইডিয়া। ও বললো - আবার তো বউ ভাত আছে। ওইদিন পার্টি করার টাকা পাবো কই ? তাই ওর বাসায় একটা কুকুরের বেল্ট ছিলো। ওটা দিয়েছে । "

আমার কথা শেষ হতেই সোহাগ প্রচণ্ড জোরে আমার নাক বরাবর ঘুষি মারলো। আমি ছিটকে দু'হাত দূরে গিয়ে পরলাম। এবার সোহাগ পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে দিয়ে বললো, " পড়। "

আমি আরেকটা ঘুষি খাবার আগে কাগজ হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলাম-

" অপ্রিয় বউ,
আমার একটা প্রেমিকা আছে। যে অনেক সুন্দরী। তোমার ভাই বিশ লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছে বলে তোমার মতো কুৎসিত মেয়ে বিয়ে করেছি। এই নাও কুকুরের বেল্ট। এটা গলায় পরে থাকবে সব সময়। আর বিঃশ্বস্ত কুকুর হয়ে কাজের মেয়ের মতো বাড়ীর সব কাজ করবে।

 ইতি
সোহাগ "

আমার পড়া শেষ হতেই সোহাগ জিজ্ঞেস করলো, " এটা রোমান্টিক চিঠি ? "
-" ইয়ে মানে বন্ধু মজা করে লিখে ছিলাম। "

-" মজা বলে এটাকে ? গিফট খুলে কুকুরের বেল্ট দেখে আর এই চিঠি পড়ে বউ আমার আমাকেই ওই বেল্ট দিয়ে পিটিয়েছে। মানুষ সোহাগ রাতে কতো কি করে! আর আমি বউয়ের হাতে মার খেয়েছি। মেরেও ক্ষান্ত হয় নি। আমার ঘর থেকে আমাকেই বের করে দিয়েছে। "

বউ এর হাতে মার খেয়েছে শুনে আমি আর হাসি থামাতে পারলাম না। সোহাগকে জড়িয়ে ধরেই হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি দিতে লাগলাম।

পরদিন সকালে দরজায় প্রচণ্ড কিল ঘুষির আওয়াজে ঘুম ভাঙে। বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না তাই সোহাগকে বললাম, " ওই যা দরজা খুল।"
- " তোর বাসা তুই খুল। "

বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই দেখি সাইফুল। আমি কিছু বলার আগেই সাইফুল বললো, " সোহাগ কই ? "
-" ঘুমায়। "
-" জলদী ওরে ওর বাসায় পাঠা। "
-" কেন ? "
-" ওর বউ গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

কথাটা শুনেই আমার ঘুম কেটে গেলো। আমি নির্বাক হয়ে বসে পরলাম। সেই সাথে মনে হলো পুরো দুনিয়া স্তব্ধ হয়ে গেলো। সাইফুল চেঁচিয়ে কি সব বলে যাচ্ছে আমি কিছুই শুনতে পারছি না। শুধু ভাবতে লাগলাম -" চিঠিটাই কি তবে দায়ী ? "

এই ঘটনার পর কেটে গেছে চার বছর। সোহাগের সামনে দাঁড়ানোর আর কখনো সাহস হয় নি। প্রায়শই সোহাগের নতুন বউ এর সুইসাইড নোটটার কথা মনে পড়ে - " বিশ লাখ টাকায় আমি নিজেকে বেঁচতে চাই নি। "

তবে মাঝে মাঝে একটা চাপা আর্তনাদ হৃদয়ের কানে ফিসফিস করে বলে, " যা কারো জন্যে মজা ; তা কারো জন্যে সাজা। "


( সমস্ত গল্প, ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই।


Comments

Popular posts from this blog

দুষ্ট মিষ্টি ভালবাসার রোমান্টিক গল্প '' কোল বলিশ "

====="কোল  বলিস"=============  একদম আমাকে স্পর্শ করবেন না। ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে, খাটে এসে বসলাম। খাটের ঠিক মাঝখানে একজন মেয়ে লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে। মেয়ে বলছি ক্যান, এখন তো নতুন বউ। হ্যা ঠিকই ধরেছেন, মেয়েটা এখন আমার বউ। বাবা মায়ের পছন্দে বিয়েটা করেছি, বিয়ের আগে দেখা করা তো দুরের কথা একবার কথাও বলিনি। বলার প্রয়োজনও মনে করি নী। কারন বাবা মায়ের উপর যথেষ্ট ভরসা আছে। আর কোন বাবা মা চাইনা তার সন্তান কষ্ট পাক। বিয়ে করে আসার পরে নানান, রতি নীতি শেষ করতে গিয়ে, বউয়ের সাথে কোন কথাই হয়নি। বন্ধুদের সাথে কিছু গল্প গুজব করে নানা রকম সাজেসন নিয়ে ১১ টার দিকে বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম। ঘরে ঢোকার আগে ভাবিরা সব বার বার করে বলে দিয়েছে, দেবরজি বেড়াল মারা চাই কিন্তু । এখানে এসে দেখি তার বিপরিত। যখনই বউয়ের ঘোমটা তোলার জন্য হাত বাড়িয়েছি, যে এত দিন না দেখা চাঁদবদন মুখটা প্রান ভরে দেখব ঠিক তখনই বউ ওই কথাটা বলল। ---কেন ঘোমটা উঠাব না কেন, তুমি এখন আমার বউ। আমার অধিকার আছে, তোমাকে স্পর্শ করার। ---চাইলে আপনি আপনার অধিকার আদায় করতে পারেন, তবে আমার মনটা পাবেন না, দেহ ছাড়া। ---তোমার কি কা...

রোমান্টিক প্রেমের গল্প "মিষ্টি বউয়ের ভালোবাসা"

আজ অফিস থেকে বাসায় এসে কলিংবেল টা বাজাতেই ফট করে দরজা খুলে গেলো। প্রতিদিন যেখানে ২ - ৩ মিনিট দাড়িয়ে থাকতে হতো । আর আজ কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথে দরজা খুলে গেলো। দরজা খুলতেই চমকে গেল হিমাদ্র। দেখে নীলিমা সামনে দাড়িয়ে! ------------ ------------ - অফিস থেকে আসতে কত সময় লাগে হ্যাঁ! ( নীলিমা রগচটা মেজাজে কথাটি বললো। হিমাদ্র চমকে উঠে বোবা হয়ে গেলো। যে মেয়েটির সাথে এক বছর হলো কোন যোগাযোগ ই নেই । সে আজ হিমাদ্রর সামনে দাড়িয়ে।) - তুমি! - ঐ আমি কি। হুম। ( চেয়ে আছে হিমাদ্র নীলিমার দিকে। কত দিন পর দেখছে। এমন সময় হিমাদ্রের মা এসে।) - কিরে এভাবে দাড়িয়ে আছিস মানে। ( হিমাদ্র ভয়ে।) - মা ও কে? - আমার বউ মা। - কি বলো এগুলা। - হুম সত্যি। - আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। - তাই না। বৌ মা একটু বুঝাও তো। ( মা চলে গেলো। নীলিমা এসে হিমাদ্র কে চিমটি।) - ইস কি হচ্ছে। ( পিছনে তাকিয়ে নীলিমার দিকে তাকিয়ে রইলো হিমাদ্র। নীলিমার চোখগুলো অনেক কথা বলছে। যা মুখের ভাষায় নয় চোখের ভাষা দিয়েই বুঝে নিতে হয়। এবার আরেক চিমটি) - ইস এরকম করো কেন! - কি রকম করি হু। - তুমি এত দিন কোথায় ছিলে। - তোমার চোখের আড়...

দলিল,খতিয়ান,ফর্সা,ফরায়েজ,খাজনা,নামজারি,দাগ ইত্যাদি কি বিস্তারিত জেনে নেই

= খতিয়ান: মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জমির দাগ নং, পরিমাণ, প্রকৃতি, খাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের খতিয়ানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে সিএস, এসএ এবং আরএস উল্লেখযোগ্য। ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাকে “থতিয়ান” বলে। খতিয়ান প্রস্তত করা হয় মৌজা ভিত্তিক। . = সি এস খতিয়ানঃ ১৯১০-২০ সনের মধ্যে সরকারি আমিনগণ প্রতিটি ভূমিখণ্ড পরিমাপ করে উহার আয়তন, অবস্থান ও ব্যবহারের প্রকৃতি নির্দেশক মৌজা নকশা এবং প্রতিটি ভূমিখন্ডের মালিক দখলকারের বিররণ সংবলিত যে খতিয়ান তৈরি করেন সিএস খতিয়ান নামে পরিচিত। . =এস এ খতিয়ানঃ ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ করেন। তৎপর সরকারি জরিপ কর্মচারীরা সরেজমিনে মাঠে না গিয়ে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে যে খতিয়ান প্রস্তুত করেন তা এসএ খতিয়ান নামে পরিচিত। কোনো অঞ্চলে এ খতিয়ান আর এস খতিয়ান নামেও পরিচিত। বাংলা ১৩৬২ সালে এই খতিয়ান প্...